ছোটগল্প

অন্ধকারের অতিথি | একটি ভৌতিক রহস্যে ঘেরা হানিমুন ট্রিপ

প্রথম অধ্যায়: অপ্রত্যাশিত যাত্রাবিরতি

রাত গড়িয়ে তখন ৯টা। নতুনবিয়ে হওয়া দম্পতি আরিয়ান ও তৃষা গাড়িতে করে পাহাড়ি জঙ্গলের রাস্তা ধরে এগোচ্ছিলেন। তাদের হানিমুনের গন্তব্য ছিল শিলং, কিন্তু GPS-এর ভুল নির্দেশনা তাদের নিয়ে গেল এক অজানা পথে।  

**”গাড়ির ইঞ্জিনটা কি ধোঁয়া উঠছে?”** তৃষা উদ্বিগ্ন হয়ে জানালার কাঁচে হাত বুলিয়ে বললেন।  

আরিয়ান গাড়ি থামাতেই দেখা গেল রেডিয়েটরে ফুটো হয়ে পানি ঝরছে। আশেপাশে কোনো গ্রাম বা মানুষ নেই—শুধু ঘন জঙ্গল আর অন্ধকার। হঠাৎ তৃষার চোখ পড়ল সামনে একটা পুরনো বাংলো বাড়ির অস্পষ্ট রূপে।  

**“ওই দেখো! বাড়িটা হয়তো কারও আছে। সাহায্য চাইতে পারি,”** আরিয়ান বললেন।  

দ্বিতীয় অধ্যায়: রহস্যময় বাংলো

বাড়িটা ছিল ঔপনিবেশিক আমলের—ঝুলন্ত বারান্দা, ভাঙা রঙের দেয়াল, আর জানালাগুলো যেন অন্ধকারে চোখ রেখেছে। দরজায় টোকা দিতেই এক বৃদ্ধ কাজের লোক এসে দরজা খুলে দিল। তার চোখ দুটো অস্বাভাবিকভাবে গভীর, গলার স্বর কর্কশ।  

**”কী চাই?”**  

**”গাড়ি খারাপ হয়ে গেছে… রাত কাটানোর জায়গা চাই,”** তৃষা বললেন।  

বৃদ্ধ তাদের ভিতরে ডেকে নিল। বাড়ির ভেতরটা আরও ভয়ঙ্কর—পুরনো ফার্নিচারে ধুলো, দেয়ালে অচেনা মানুষের বিবর্ণ ছবি, আর কোথাও থেকে টপটপ পানির শব্দ।  

**”আপনি একা থাকেন এখানে?”** আরিয়ান জিজ্ঞেস করলেন।  

**”হ্যাঁ… কিন্তু আপনারা একা নন,”** বৃদ্ধ অস্পষ্টভাবে বলে হাসল।  

তৃতীয় অধ্যায়: প্রথম ভৌতিক সঙ্কেত

তাদের জন্য দেওয়া ঘরটায় বিছানা ছিল সাদা চাদরে ঢাকা। তৃষা লক্ষ করলেন, চাদরটা একদম নতুন—যেন কেউ সদ্য পরিষ্কার করেছে। কিন্তু বাড়ির বাকি অংশ এত নোংরা কেন?  

হঠাৎ জানালার পর্দা নাড়া দিয়ে উঠল! বাইরে কুয়াশা ভেদ করে এক পাণ্ডুর মুখ দেখা গেল—চোখহীন, শুধু খোলা মুখের গহ্বর। তৃষা চিৎকার করতেই মুখটা উধাও হয়ে গেল।  

**”কী দেখলে?”** আরিয়ান দৌড়ে এলেন।  

**”কেউ… জানালায়…”** তৃষার গলা শুকিয়ে গেল।  

বৃদ্ধ নিচ থেকে ডাকল, **”ঘুমানোর আগে দরজা বন্ধ রাখবেন। রাত এখানে… বিপজ্জনক।”**  

চতুর্থ অধ্যায়: মধ্যরাতের আতঙ্ক

রাত ১২টা। ঘড়ির টিকটিক শব্দ ছাড়া সব নিস্তব্ধ। হঠাৎ আরিয়ান শুনতে পেলেন—**কেউ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে!** পায়ের শব্দ তাদের দরজার সামনে এসে থামল। দরজার হাতলটা নড়ছে!  

তৃষা আরিয়ানের হাত চেপে ধরলেন। শব্দটা চলে গেল… কিন্তু তখনই **ছাদের ফ্যান থেকে রক্ত পড়া শুরু হলো!**  

**”এখান থেকে পালাতে হবে!”** আরিয়ান ফিসফিস করে বললেন।  

তারা দরজা খুলতেই দেখলেন—**সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আছে সেই বৃদ্ধ!** কিন্তু এখন তার চোখ দুটো সম্পূর্ণ কালো, মুখ বিকৃত।  

**”আমি বলেছিলাম… দরজা বন্ধ রাখতে,”** বৃদ্ধ গর্জন করল।  

পঞ্চম অধ্যায়: গৃহিণীর সত্যিকারের পরিচয়

দম্পতি দৌড়ে নিচে গেলেন। দরজা-জানালা সব বন্ধ! হঠাৎ তৃষা লক্ষ করলেন, দেয়ালে ঝোলানো ছবিগুলো আসলে **মৃত মানুষের শেষ ছবি**—সবাই এই বাড়িতে মারা গেছে!  

বৃদ্ধ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছিল… কিন্তু তখনই **বাড়ির গভীর থেকে এক সাদা পোশাকের মহিলার আত্মা বেরিয়ে এল!** সে বৃদ্ধকে থামিয়ে দিল।  

**”চলে যাও… এরা আমার শিকার না,”** আত্মাটি বলল।  

দম্পতি সেই সুযোগে পেছনের দরজা ভেঙে বেরিয়ে গেলেন।  

ষষ্ঠ অধ্যায়: ভোরের আলোয় সত্য

সকালে স্থানীয় পুলিশ গাড়িটি দেখে বাড়িতে এল। তারা বাড়ি তল্লাশি করে **বেসমেন্টে পেল বৃদ্ধের মমি করা দেহ—যে মরেছিল ২০ বছর আগে!**  

পুলিশের রিপোর্টে লেখা ছিল:  

**”এই বাড়িতে ১৯৯৮ সালে এক গৃহিণী আত্মহত্যা করে। তারপর থেকে যারা এখানে আসে… তারা কেউ ফেরে না।”**  

শেষাংশ: অদৃশ্য সতর্কবার্তা

আরিয়ান ও তৃষা বেঁচে ফিরলেও, ক্যামেরার ফুটেজে সেই গৃহিণীর হাসিমুখ দেখা গেল… যেন এখনও কেউ সেই বাংলোয় অপেক্ষা করছে!

মোশাররফ ও দয়ালু কুকুরছানা – ছোটদের জন্য শিক্ষণীয় ইসলামিক গল্প

Author