ইতিহাস - ছোটগল্প

“একটি মুহূর্তের ছবি, এক ফটো সাংবাদিকের শেষ নিঃশ্বাস”

<

শকুন ও শিশুটি – একটি ছবি, একটি পৃথিবীর বিবেক এবং একটি আত্মঘাতী প্রশ্ন

ভূমিকা

১৯৯৩ সালে দক্ষিণ সুদানে তোলা একটি ছবি — যেখানে এক ক্ষুধার্ত শিশু মাটিতে কুঁকড়ে পড়ে আছে এবং পেছনে একটি শকুন চুপচাপ অপেক্ষা করছে। সেই মুহূর্তটি শুধু একটি ছবি নয়, ছিল এক কঠিন বাস্তবতা, এক মানবিক সংকটের প্রতিচ্ছবি। ছবিটি বিশ্ববাসীর হৃদয় নাড়িয়ে দিয়েছিল। এই ছবির পিছনে যিনি ছিলেন — ফটোগ্রাফার কেভিন কার্টার, পরবর্তীতে এই ছবির কারণে মানসিক যন্ত্রণায় আত্মহত্যা করেন।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

১৯৯৩ সালের মার্চ মাস। দক্ষিণ সুদানে তখন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ চলছে। হাজার হাজার মানুষ, বিশেষ করে শিশু, অপুষ্টি ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। জাতিসংঘ খাদ্য সহায়তা পাঠাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তা পৌঁছাচ্ছে দেরিতে। এমনই এক পরিস্থিতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার ফটোগ্রাফার কেভিন কার্টার যান সেখানে রিপোর্ট করতে।

গ্রামের একটি নির্জন প্রান্তে তিনি দেখেন একটি শিশুর নিথর দেহ, হাঁটার শক্তি হারিয়ে বসে পড়েছে। শিশুটির কিছুদূরে বসে আছে একটি শকুন — যেন মৃত্যুর অপেক্ষায়।

ছবির প্রভাব ও পুলিৎজার জয়

এই ছবি প্রকাশিত হয় The New York Times-এ। মুহূর্তেই তা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে। পরে ছবিটি ১৯৯৪ সালে পুলিৎজার পুরস্কার জিতে নেয়।

কিন্তু এর পাশাপাশি একটি প্রশ্ন উঠে আসে:
“কেভিন, তুমি শিশুটিকে সাহায্য করোনি কেন?”

নৈতিক বিতর্ক

এই ছবির সবচেয়ে বড় বিতর্ক — একজন ফটোগ্রাফারের মানবিক দায়িত্ব কী? ছবি তোলা, না মানুষকে বাঁচানো?

  • অনেকে বলেন, এই ছবি যতজনকে দুঃখ দিয়েছে, ততজনকে জাগিয়ে তুলেছে।
  • অনেক দাতব্য সংস্থা এই ছবির মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে কাজ শুরু করেছিল।
  • অন্যদিকে, কেভিনকে দেখতে হয়েছিল নিষ্ঠুর সমালোচনার মুখ।
“আমি ভাবছিলাম, আমি যেন ঈশ্বরকে দেখছি।” — কেভিন কার্টার

কেভিন কার্টারের আত্মহত্যা

১৯৯৪ সালের জুলাই মাসে, মাত্র ৩৩ বছর বয়সে, কেভিন কার্টার আত্মহত্যা করেন। তাঁর সুইসাইড নোটে লেখা ছিল:

“I am haunted by the vivid memories of killings and corpses and anger and pain… starving or wounded children…”

ছবিটির বর্তমান প্রভাব

আজও এই ছবি দেখা যায় বিভিন্ন মানবাধিকার রিপোর্ট, সচেতনতামূলক পোস্টার, এবং দুর্ভিক্ষবিষয়ক প্রচারে। এটি একটি “চেতনার চাবিকাঠি” হয়ে উঠেছে।

উপসংহার

এই ছবি আমাদের একটা প্রশ্ন করে:

“আপনি কি শুধুই দর্শক, না কি একজন দায়িত্ববান মানুষ?”

‘শকুন ও শিশুটি’ – শুধুই একটি ছবি নয়, এটি একটি আত্মদংশনের প্রতিচ্ছবি। আর কেভিন কার্টার ছিলেন সেই আত্মার সৈনিক, যিনি সত্যকে ধরেছিলেন, কিন্তু নিজে মুক্তি পাননি।

আপনার মতামত দিন

এই ছবির বিষয়ে আপনার কী মত? আপনি কি মনে করেন ফটোগ্রাফারের মানবিক হস্তক্ষেপ করা উচিত ছিল? নিচে কমেন্টে জানান।

আরও পড়ুন:

Author